অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আধিপত্য উৎখাতের দাবি করছি
গত মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪) শারদীয় দুর্গাপূজা যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে উদযাপনের লক্ষ্যে এক সভায় অতিসাম্প্রতিক দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিষয়ে সতর্ক থাকার জন্য সকলকে আহ্বান জানানো হয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আমরা মনে করি, এই আহ্বান অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে এবং সেটা সমীচীন প্রশাসনিক চিন্তার প্রকাশ। সেজন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ।
যেহেতু ‘দুর্বৃত্তায়ন’ শব্দটির আগে ‘রাজনীতিক’ বিশেষণটি প্রযুক্ত হয়েছে সেহেতু নির্দিষ্ট বক্তব্যটির তাৎপর্য গভীরতা পেয়েছে এবং ধর্মীয়সভায় প্রদত্ত হলেও বক্তব্যটি সত্যিকার অর্থেই রাজনীতিক হয়ে উঠেছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারও কারও ধারণা, দুর্বৃত্তায়ন একধরণের রাজনীতিক আধিপত্য। দেশ-বিদেশের তাবড় তাবড় জ্ঞানীজনেরা মনে করেন, বর্তমান দুনিয়া প্রকৃতপ্রস্তাবে আধিপত্যের করতলগত, যে-আধিপত্যকে তাঁরা সা¤্রাজ্যবাদ বলে সংজ্ঞায়িত করেছেন। আসলে সা¤্রাজ্যবাদ একধরণের রাজনীতিক আধিপত্য, যেখানে বা যে-ঐতিহাসিক কালপর্বে দুনিয়ার আর্থনীতিক ও রাজনীতিক জীবনে ধনকুবেরগোষ্ঠী আধিপত্য করে এবং দেশে দেশে স্বজনপোষণের অর্থনীতির আবির্ভাব ঘটে দুর্বৃত্তায়নের করতলগত হয় সমগ্র সমাজ। আমাদের দেশে এই স্বজনপোষণের অর্থনীতি দুর্বৃত্ত ধনকুবেরদের সংখ্যা ব্যাপকাকারে বাড়িয়ে দিয়েছে, হাজার-লক্ষ কোটি টাকার ঋণখেলাপি সৃষ্টিসহ বিদেশে বিপুল পরিমিত পুঁজি পাচারের পথ খোলে দিয়েছে এবং জাতীয় সংসদে প্রকারান্তরে পুরোপুরি ধনকুবেরদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে সংসদীয় ব্যবস্থাকে করে তোলেছে জনগণের বদলে ধনকুবেরদের সেবক। বর্তমানে দুনিয়া সে-সা¤্রাজ্যবাদী আধিপত্যের করতলগত আছে। আমাদের বাংলাদেশ তার বাইরে নয়, এখানেও সহযোগিতা কিংবা সাহায্যের অজুহাতে প্রকারান্তরে রাজনীতিক আধিপত্যই বিস্তার করা হয়ে থাকে। কেউ কেউ মনে করেন, সতর্ক না হলে এই আধিপত্য প্রবণতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অর্জনকে ব্যর্থ করে দিতে পারে।
পুঁজিবাদী আর্থসামাজিক গঠনরূপের পরিসরে সর্বত্র অর্থাৎ সমাজসংস্কৃতির সবখানে আধিপত্য বিদ্যমান থাকে। রক্ষা পেতে হলে প্রতিহত করতে হয়। এখানে পূজাম-পের পরিসরে দুর্বৃত্তায়নের আশঙ্কা করে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকার জন্যে জানানো হচ্ছে। কারণ সবখানে যেমন তেমনি শারদীয় দুর্গাপূজার পরিসরেও দুর্বৃত্তায়ন একধরণের আধিপত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করে। আধিপত্য হলো প্রভুত্ব করার লক্ষ্যে পরিচালিত রাজনীতি, হতে পারে তা ইতিবাচক কিংবা নেতিবাচক। দুর্বৃত্তায়নকে আমরা বলতে পারি, নেতিবাচক রাজনীতি। পূজাকে কেন্দ্র করে কোনও ব্যক্তি বা দল বিশেষের আধিপত্য, প্রভুত্ব কিংবা রাজনীতি কারও কাম্য হতে পারে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে কথাই জানিয়ে দেওয়া হলো, আশা করি, তা বাস্তবায়িত হবে। তাতেই মঙ্গল।
পূজাম-পের ক্ষেত্রে দুর্বৃত্তায়নের আশঙ্কা করে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অপরদিকে সুরমা নদীর উত্তরপাড়ের বালুমহালে দুর্বৃত্তায়ন চলছে পুরোদমে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেমন চলছিল, তেমন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও তা বিদ্যমান আছে। মহালগুলোতে আগে আধিপত্য বা প্রভুত্ব ছিল সরকার দলের এখন অন্যদলের আধিপত্য কার্যকর আছে। হরেদরে সমান কথা, আধিপত্য বা প্রভুত্বের হাত বদল হয়েছে মাত্র। এই আধিপত্য বা প্রভুত্বের অবসান চাই, আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই দাবি উত্থাপন করছি।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ